মানুষ ও কুকুর" গল্পের প্রতীকধর্মী মুহূর্ত — যেখানে কুকুর নয়, ভয় জন্মায় মানুষ থেকেই। |
গল্পের শিরোনাম: "মানুষ ও কুকুর"
উপন্যাস: নরখাদক (থেকে সংকলিত)
অন্ধকার রাতে, যখন আকাশের গায়ে কোনো তারা ছিল না, তখনই-
সুবর্ণা হাঁটছে। রাত গভীর, চারদিকে নীরবতা। নিঃসঙ্গ রাস্তার ধুলো জমে আছে। অন্ধকারের চাদরে মোড়া প্রত্যন্ত গ্রামের পথ ধরে একলা হাঁটতে থাকা মেয়েটি ঠিক রাস্তার মতোই — নীরব, নিঃসঙ্গ, অথচ আশঙ্কায় টলমল। কিন্তু তাকে অবিলম্বে ওষুধ কিনে আনতে হবে।
অসুস্থ বড় ভাই - তার শরীরের প্রতিটি স্নায়ু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বাপ-মা অতীত! সে ব্যতীত আর কেউ নেই।
গ্রামের মুদি দোকানে মিলবে প্রাথমিক ওষুধ।
কিন্তু...
সে ভয় পায়।
সে ভয় পায়—
কুকুরদের নয়।
ভয় পায় নরখাদকদের।
ওরা জানে কীভাবে শিকার ধরতে হয়, কীভাবে সরলতাকে অস্ত্র বানিয়ে ছিন্নভিন্ন করতে হয়। ওরা শুকরের মাংস খায় না, কিন্তু নবযুবাদের মাংস খেতে নেকড়ে তুল্য । পবিত্রতার মুখোশ পরে যারা রাতের অন্ধকারে লালসার নরখাদকে পরিণত হয়, সুবর্ণা ভয় পায় তাদেরই।
রাস্তার পাশে জংলা ঝোপ, ঝোপের ফাঁক দিয়ে চাঁদের ম্রিয়মাণ আলো ঠিকরে পড়েছে তার মুখে। দৃষ্টিতে ভয় নেই, কিন্তু বুকের ভেতর একটা সুনামি চলছে। অন্ধকারের ভেতর কোথাও থেকে একটা পাতার খসখস শব্দ আসে। সুবর্ণা থমকে দাঁড়ায়।
হঠাৎ দেখে, সামনে কয়েকটি কুকুর বসে আছে। চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে।
তার শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত নামে। আতঙ্কে সে পা বাড়াতে অপ্রস্তুত, কিন্তু কুকুরগুলো কেবল তাকিয়ে আছে। দৌড়ে এলো না, থাবা বাড়াল না—শুধু তাকিয়েই রইল।
তারা যেন চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে-
"ভয় নেই, ভয় নেই,
আমরা কুকুর, মানুষ নই ।"
সুবর্ণার রুহবিন্দু হতে একটি কথা ভেসে আসছে,
ওরা কুকুর—তাদের ভয় কীসের?
ভয় তো সেইসব মানুষের, যারা মুখোশ পরে সুযোগ খোঁজে। যারা মানুষের মাংস ছিঁড়ে খেতে দ্বিধাবোধ করে না, অথচ দিনের আলোয় নৈতিকতার ভাষণ দেয়।
পেছনে একটা সুনসান পদধ্বনি ভেসে আসে।
এবার সুবর্ণার গা শিউরে ওঠে।
সে জানে—
এই রাত, এই পথ, এই নীরবতা—সবই সাক্ষী।
যদি সে হারিয়ে যায়, মানুষ বলবে, "নিশ্চয়ই সে ভুল পথে গিয়েছিল।"
কেউ বলবে না, "অন্ধকার পথটাকে কেন এত হিংস্র করে রাখা হলো?"
সুবর্ণা হাঁটতে শুরু করে।
কুকুরগুলো সরে যায়,
তারা জানে—
ওরা নয়, আসল হিংস্রতা অন্য কোথাও।
লিখেছি-
13 March 2025
আরও পরুন-